আমার এক শিক্ষক বলতেন, স্কুলটাই হচ্ছে ধরে ধরে শেখানোর জায়গা। এজন্য উন্নত বিশ্বে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেক বেশি শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। আসলেই। আমরা স্কুলে দশ বছর পার করে যতটুকু শিখি, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২-৫ বছরে তার চেয়ে অনেক বেশি শিখতে হয়।
স্কুলে বিভিন্ন মূল্যবোধের চর্চা যেভাবে করানো ও শেখানো যেতে পারে, তা অন্য কোনো অঙ্গনে সম্ভব নয়। কিন্তু এই স্কুল নিয়েই আমরা প্রচুর ভুল ধারণা পোষণ করি,ভুল ধারণা মোতাবেক কাজ করি এবং স্কুল পাশ করে চলে যাবার পর এগুলোকে ভুল ধারণা বা মিসকন্সেপশন বলে বুঝতে পারি।
আমার মনে হয়েছে স্কুলে পড়তে যত খরচ হয়, (বছর বছর ভর্তি ফি, সেশন ফি, মেইন্টেন্যান্স ফি, পরীক্ষার ফি, অনুষ্ঠানের ফি, খাতা-ডায়েরির খরচ, প্রাইভেট টিউশন ইত্যাদি) সে তুলনায় আমরা ঠিক আউটপুটটা পাই না। এর কিছুটা শিক্ষার্থীর ভুল, কিছুটা অভিভাবকে ভুল আর কিছুটা শিক্ষক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়। সেসব থাক। আজকে আমি শিক্ষার্থীদের কিছু ভুল ধারণা নিয়ে বলতে চাচ্ছি, যা অনেকসময় অভিভাবক দ্বারা প্ররোচিত হয়ে থাকে। তাই শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক দুজনকেই সচেতন হতে বলব।
গ্রস লেখা শুরুর আগে আরেকটা কথা, এই ভুল ধারণা গুলো কেন সংশোধন করা জরুরি? কারণ পরবর্তী শিক্ষাজীবনে স্কুল জীবনের একটা প্রভাব থেকে যায়, যেটা শিক্ষার্থীর জন্য আনন্দদায়ক বা দুর্বিষহ উভয়ই হতে পারে। যেন আনন্দদায়ক হয়, শিক্ষার্থী যেন তার স্কুলজীবন থেকে সবচেয়ে ভালো শিক্ষা নিয়ে যেতে পারে, তাই তাদের ভুল ধারণা দূর করার এ প্রয়াস লিপিবদ্ধ করলাম।
Table of Contents
১। রোল ১ হইতেই হবে।
স্কুলজীবনের ভুল ধারণার হিসাব করলে মোটাদাগে এটাই এক নম্বরে থাকবে। এটা বলছি না যে সব রোল এক নাম্বারধারী পরবর্তীতে ভালো করে না, তবে এই রোল নাম্বারের পিছনে ছোটা একটুও ভালো বা ফলপ্রসূ কিছু না।
স্কুলজীবন শেখার সময়। ভাঙা-গড়ার সময়। এসময়ের শেখাটা ভিত্তি বা বেসিক হিসেবে কাজ করে। স্কুল থেকে যে ভিত্তি গড়ে ওঠে, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সেটার উপরই দাঁড়িয়ে থাকে। তাই স্কুলজীবনে যতটা সম্ভব আনন্দ নিয়ে পড়া উচিত। কেননা পরবর্তী সময়ের পড়াশোনা এত নমনীয় হয় না। তখন অনেক বেশি জানতে হয়, অনেকগুলো পাঠ্যবই পড়তে হয়। তাই এসময়ে জানা বা শেখার পদ্ধতি উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
শিখন দক্ষতা ও প্রয়োগের উন্নতি যখন ঘটে, তখন পরীক্ষার খাতাতেও সেটি প্রতিফলিত হয় এবং শিক্ষকরা ভালো মার্কিং করেন। সেই শিক্ষার্থীর ফল তখন এমনিতেই ভালো হয়। এই যে নিজের শিখন ও চিন্তন ক্ষমতার উন্নতি করা, এটা একটা লং টার্ম প্রসেস। এবং লং রানে এটি খুবই সহায়তা করে। তাই বলব, তুমি রেজাল্টের দিকে মনোযোগ দিও না। কোনো বিষয় ভালোমতো বুঝে আত্মস্থ করায় মনোযোগ দাও, ভালো রেজাল্ট তোমার কাছে চলে আসবে।
২। খালি স্কুলে আসবো যাবো, কোনকিছুতে নাম দেওয়ার দরকার নেই।
এই যে শেখার কথা উপরে বললাম। সব শিক্ষা কিন্তু ক্লাসরুম থেকে পাওয়া যায় না। তাইতো কবি বলেন, “বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র।” না, শৈশব- কৈশোরে শিক্ষার সন্ধানে বিশ্ব ঘোরার দরকার নেই। শুধু তোমার স্কুল জুড়ে তোমার জন্য যেসব শিক্ষা উপকরণ ছড়িয়ে আছে, সেগুলোর সদব্যবহার করো।
একটা স্কুলে ডিবেটিং ক্লাব, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, সাংস্কৃতিক ক্লাব, আইটি ক্লাব, রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউট, বিএনসিসি, বিজ্ঞান ক্লাব এরকম অনেক ক্লাব থাকতে পারে। সেগুলোর সাধারণ সদস্য থেকে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কিন্তু শিক্ষার্থীরাই। আর কিছু শিক্ষক থাকেন তাদের দিকনির্দেশনা দেবার জন্য। এই ক্লাবগুলোতে যোগ না দেওয়ার একটা বড় অজুহাত হলো, পড়াশোনার ক্ষতি হবে।
এই সহশিক্ষা কার্যক্রমের গুরুত্ব বলাই বাহুল্য। ভবিষ্যতে বিভিন্ন মানুষের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করার একটা বড় শিক্ষা এখান থেকেই পাবে। শিখতে পারবে কীভাবে একাধিক দায়িত্বের মাঝে ভারসাম্য রাখতে হয়, সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হয় বা চেইন অব ডিসিপ্লিন কীভাবে বজায় রাখতে হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি এগুলো করার চেষ্টা করা ভালো। এতে পড়াশোনাও ভালো হয়।
৩। শুধু নিজের আগের রোলদের সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে।
এটা স্কুলজীবনের ভুল ধারণাগুলোর মধ্যে অন্যতম বিরক্তিকর একটা ধারণা। আচ্ছা, বন্ধু কে হয়? মানুষ নাকি তার মার্কশিট? যাদের রোল তোমার চেয়ে ভালো, তারা সবসময় যে তোমার প্রতি আন্তরিক ও সহমর্মি হবে, তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই যে তোমাকে যেমন বলে দিয়েছে তোমার চেয়ে ভালো যারা তাদের সাথে মিশতে, তাদেরকেও তো কেউ বলতে পারে। সে হিসেবে তাদের তো তোমার সাথে বন্ধুত্ব করার কথা না।
সবার সাথেই মিশতে হবে। সবার কথা শুনতে হবে। কারো মধ্যে যদি তোমার চেয়ে ভালো কিছু পাও, তা নির্দ্বিধায় গ্রহণ করবে। আর কারো মধ্যে খারাপ কিছু দেখলে, তা থেকে সরে আসবে। আজকে যারা তোমার চেয়ে একটু কম ভালো রেজাল্ট করছে, আগামীতে তারা তোমার চেয়ে এমনকি রোল ১ এর চেয়েও ভালো করতে পারে। ক্লাস ৬ এ যার রোল ৪৫ ছিল, ক্লাস ৯ এ এসে তার রোল ১ হতেই পারে। তাই রোল দেখে বন্ধুত্ব করার অপশন বাদ দিয়ে দিতে হবে।
৪। সব টিচারের কাছে প্রাইভেট পড়তে হবে।
এই ভুল ধারণাটা হয় কারণ ছাত্ররা মনে করে যে সব শিক্ষক তাদের চেহারা চিনে ফেলবে আর পরীক্ষার খাতায় নাম দেখলে এক-দুই নম্বর বেশি দেবে।
ক্লাসের পড়া ক্লাসেই ভালোমতো বুঝে নিলে প্রাইভেটের দরকার পড়ে না। কোনো বিষয়ে যদি তোমার দুর্বলতা থাকে, সেটা ক্লাসের পরে শিক্ষককে অবহিত করতে পারো। তারপরও যদি তোমার আরো সাহায্য দরকরা হয়, তখন কোনো শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে পারো। কিন্তু ক্লাসে ভালো পড়া হওয়ার পরেও শুধু মুখচেনা বা সেই শিক্ষকের প্রিয় হওয়ার জন্য প্রাইভেট পড়তে যাওয়াটা অর্থ ও সময়ের অপচয় বলে আমার কাছে মনে হয়। আর কোনো শিক্ষক যদি প্রাইভেট পড়ার জন্য জোর বা বিভিন্নভাবে বাধ্য করেন (এটা শিক্ষকসুলভ আচরণ নয়) তাহলে সব শিক্ষার্থী মিলে প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষকে বিষয়টি জানাতে পারো। নিজেরা অপারগ হলে অভিভাবকদের বলতে পারো তোমাদের হয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার জন্য।
৫। গল্পের বই পড়া ভালো না।
এই ভুল ধারণা এখনো কীভাবে টিকে আছে তা ভেবে অবাক হই। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অন্য বইকে এখনো অনেকে দুয়োরানির সন্তান হিসেবে দেখে। যেখানে বইগুলো পড়লে শব্দভাণ্ডার বাড়ে, নানা অভিজ্ঞতায় মন ও মনন সমৃদ্ধ হয়, সেখানে এগুলো নাকি বাহুল্য। স্বল্পপরিসরের পাঠ্যবই আমাদেরকে শুধু রাস্তা চিনিয়ে দেয়, সেই রাস্তা ধরে আমাদের জ্ঞানের সন্ধানে হাঁটতে হবে।
পাঠ্যবই আমাদেরকে জ্ঞানের চুম্বক অংশটা পরিবেশন করে, বিস্তারিত থাকে বিভিন্ন সাহিত্যকর্মের পাতায়। স্কুলজীবনের ক্ষেত্রে তো এটি আরও সত্য। বই না পড়লে মানুষ চিনবে না। মনকে উন্মুক্ত করতে পারবে না। সমাজে বসবাস করেও বিভিন্ন স্তরের মানুষের কথা তোমার জানা হবে না। এই নিয়ে তোমরা প্রমথ চৌধুরীর ‘বই পড়া’ প্রবন্ধটি পড়তে পারো। পড়ে অবাক হবে যে, শত বছর আগে ভদ্রলোক যা বলে গেছেন, তা আজও কতটা প্রাসঙ্গিক।
৬। ইংরেজিতে ভালো হওয়ার জন্য সব গ্রামার বই মুখস্থ করতে হবে।
আমাদের দেশে বেশিরভাগ স্কুলে ইংরেজি এমনভাবে শেখানো হয় যেন তা গণিত বা বিজ্ঞানের মতো কোনো বিষয়। ইংরেজিকে ভাষা হিসেবে না দেখে সাবজেক্ট হিসেবে দেখায় আমাদের মনে হয় গ্রামার ই বুঝি ইংরেজিতে ভালো করার মূলমন্ত্র।
কোনো ভাষা শেখার ধাপ আসলে চারটি। লিসেনিং (শোনা), স্পিকিং (বলা), রিডিং (পড়া) আর রাইটিং (লেখা)। আমরা আমাদের মাতৃভাষা শিখি প্রথম দুটো ধাপের মাধ্যমে, আর ইংরেজি শিখি পরবর্তী দুটো ধাপের মাধ্যমে। সেজন্য গ্রামারের একের পর এক রুল মুখস্ত করেও যেন ইংরেজির তল পাই না।
ইংরেজি শিখতে হবে যেন দুলাইন কথা বলতে, পড়তে বা বলতে সমস্যা না হয়। সেজন্য আগে ভোকাবুলারি উন্নত করা জরুরি। ইংরেজি সংবাদপত্র বা বই দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। পডকাস্ট শোনাও ভালো অপশন। ভালোভাবে কীভাবে ইংরেজি শেখা যায়, তার একটা লিংক এখানে দিলাম।
ইংরেজি শেখার সহজ উপায়: কীভাবে পারদর্শী হবেন ইংরেজিতে?
৭। বাংলা ব্যকরণ সব মুখস্থ করলেই হবে।
বাংলা ব্যাকরণ ভালোভাবে পড়ে বোঝার জন্য শিক্ষক ও ছাত্র দুজনের তৎপরতাই সমানভাবে প্রয়োজন। ক্লাসে যদি শিক্ষকের কাছ থেকে ভালো সাহায্য না পাও, আমার পরামর্শ থাকবে অন্য শিক্ষক বা অনলাইন কন্টেন্টের সাহায্য নেওয়ার। ব্যাকরণ মোটেই হেলাফেলা করার কিছু না।
কারণ এই ব্যাকরণ ক্লাস ৭ থেকে শুরু করে কলেজ, ভর্তি পরীক্ষা এমনকি বিসিএস, চাকরির পরীক্ষা পর্যন্ত কাজে লাগে। না বুঝে মুখস্ত করে গেলে বারবার ভুলে যাবে এবং শেখার আগ্রহ ও হারিয়ে যাবে। ব্যাকরণ একটা আন্ডাররেটেড বিষয়, যেটা অনেক গুরুত্ববহ হলেও সবাই ভুল ধারণা করে এর ব্যাপারে। ব্যাকরণ মুখস্ত করার চেয়ে অনেকগুলো উদাহরণ দিয়ে বুঝে বুঝে পড়লে বেশি মনে থাকে। যেমন : তুমি সন্ধিতে পড়ছো আ+অ= আ। কিন্তু যদি উদাহরণ দিয়ে পড় কথা+অমৃত = কথামৃত ; আশা + অতীত = আশাতীত তাহলে ভালোভাবে মনে থাকবে। অঙ্কের ক্ষেত্রেও এভাবে করতে পারো। কোনো সূত্র মনে না থাকলে সেই সূত্রের অঙ্ক বারবার সমাধান করো, লিখতে লিখতেই একসময় সূত্রটা মুখস্থ হয়ে যাবে।
৮। স্কুলে যাওয়ার চেয়ে বাসায় পড়া ভালো।
একটা বড়সড় সাইজের ভুল ধারণা। অনেকের অভিমত যে ক্লাসে শৃঙ্খলা রক্ষা করতেই অনেক সময় যায় বলে পড়া হয় না। এটা মিথ্যা নয়। তবে সমস্যা হচ্ছে, শিক্ষক তোমার পরীক্ষার খাতায় সেভাবে উত্তর লেখা দেখতে চান যেভাবে তিনি শিখিয়েছেন। ক্লাসে না গেলে তো তুমি এই দিকনির্দেশনা মিস করলে। আরেকটা ভুল ধারণা হচ্ছে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে স্কুলের চেয়ে ভালো পড়ায়। এটা থেকেও বের হয়ে আসতে হবে।
স্কুলে তুমি যেভাবে শিখবে সেভাবে কোচিং তোমাকে সাহায্য করতে পারবে না। স্কুলে নিয়মিত হতে হবে। বাসায় পড়াশোনা করে পরীক্ষা দেওয়াই যদি ভালো হতো, তাহলে স্কুল থাকার দরকার ছিল না। উচ্চশিক্ষার সময় কিন্তু কোনো কোচিং তোমাকে লেকচার পড়িয়ে দিবে না। তাই স্কুল থেকেই ক্লাসের পড়া অনুসরণ করে পড়ার অভ্যাস করা ভালো। স্কুলে আসার আরেকটা বড় সুবিধা হলো, ক্লাসের পড়া অনেকসময় ক্লাসেই হয়ে যায় বলে বাসায় তোমার কষ্টটা কমে যায়।
৯। খেলাধুলার দরকার নেই।
বলেছে! স্কুলজীবনের অন্যতম আনন্দদায়ক স্মৃতিই তো খেলাধুলার মূহুর্তগুলো। এখন জামাকাপড় ময়লা হবে বা হাত পায়ে ব্যথা পেলে বাসায় বকা দেবে ভেবে খেলাধুলায় পিছিয়ে থাকো, তাতে তোমারই ক্ষতি। খেলাধুলার গুরুত্ব এতই বেশি যে স্কুলে শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নামের একটা আলাদা বই ই পড়ানো হয়। আসলে পড়ানো হয় না, পড়ে নিতে বলা হয়। অন্তত এই বইটাতে যেসব ব্যায়াম আর খেলাধুলার কথা আছে, তার ৬০-৭০ % স্কুলে করালেও শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নতি হয়।
এখন একটা ভালো দিক হচ্ছে, সব স্কুলেই বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়। সারা বছর না খেলো, অন্তত ওই সময়টাতে একটু খেলাধুলা করে নিজের পরিবর্তন দেখো। আর যাদের স্কুলে খেলার মাঠ নেই, তাদের আসলেই অনেক দুঃখ। তারা এলাকার খেলার মাঠে, বাসার ছাদে বা গ্যারেজে খেলাধুলা করতে পারো। পিসিতে মাইনক্রাফট বা মোবাইলে ফিফা না খেলে দল বেঁধে একটু ফুটবল, ক্রিকেট বা কাবাডি খেললে সেটাই বরং বেশি ভালো।
১০। পড়া নিয়ে কারো সাথে কোনো কথা বলার দরকার নেই।
অনেকে এ ভুল ধারণা পোষণ করে যে, তাদের কোনো সহপাঠীর সাহায্য নেওয়ার বা কাউকে সাহায্য করার দরকার নেই। আসলে, জ্ঞান হলো মোমবাতির মতো। একটা মোমবাতি দিয়ে আরেকটাকে জ্বালানো হলে তার উজ্জ্বলতা কী কমে যায়? সহপাঠী হয়ে যদি একজন আরেকজনকে সাহায্য নাই করি, তাহলে সহপাঠী হয়ে লাভ কী? উলটো, সহপাঠীদের সাথে পড়া নিয়ে বেশি বেশি কথা বলা উচিত।
কাউকে কোনো কিছু বুঝিয়ে দিলে তোমার নিজের শেখা আরো স্ট্রং হবে। বিশ্বাস না হলে চেষ্টা করে দেখতে পারো। নিজেরা মজার মজার সব গল্প বা নেমোনিক তৈরি করে পড়তে পারো। যেমন : রিমন নামের এক Homo sapiensআমাদের সাথে পড়ে। সে Periplaneta americana দেখে ভয় পায় আবার বলে যে Panthera tigrisমারতে পারবে। ও একটা Boss indica পালে।
এখানে কী হলো? তোমার বই আর বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে বের করো। শুভকামনা!
১১। মনিটর একদমই হওয়া যাবে না।
নেতৃত্ব দেওয়া বা প্রতিনিধিত্ব করা এমন একটা কাজ, কেউ প্র্যাকটিস করে শেখে, আবার কারো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে এটা থাকে। প্র্যাকটিস করে শিখতে হলে স্কুল থেকেই কাজে নেমে পড়ো। স্কুলে ৫০-৬০ জনের প্রতিনিধিত্ব করা ও তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজ করতে করতেই বড় পরিসরে নেতা হবার সুযোগ আসবে।
নেতা হলে তোমার নিজের যে ব্যক্তিত্ব, তাতে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আনার সুযোগ পাবে। একটা সিদ্ধান্তে সবাইকে একসাথে সন্তুষ্ট করা যায় না, কীভাবে সবার খেয়াল রাখতে হয়, কীভাবে অন্যদেরকে সাহায্য করতে হয়, কীভাবে সবাইকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা যায়, কীভাবে অন্যায় সুবিধা এড়িয়ে চলতে হয় এবং নিজের দায়িত্বের প্রতি সৎ থাকতে হয়, এরকম অনেক কিছু শেখার আছে।
১২। যত ক্লাসে পড়ো, তত ঘণ্টা পড়তে হবে।
পড়াশোনার সময় আপেক্ষিক একটা বিষয়। কারো অনেক কম সময় লাগে, কারো বেশি। তাই বলে এই ভুল ধারণ রেখো না যে, আমাকে নির্দিষ্ট এত ঘণ্টা পড়তেই হবে। ভালো শিক্ষার্থী হবার জন্য নিয়মিত পড়াশোনা জরুরি কিন্তু সেটা যেন তোমার সাধ্যের মধ্যে থাকে। স্কুল জীবনের তুলনামূলক সহজ পড়াশোনায় যদি নিজের অতিরিক্তটা দিয়ে পড়ো তাহলে লং রানে ক্লান্ত হয়ে যাবে। সবসময় নিজের সাধ্যের সর্বোচ্চটা বড় কোনো সময়ের জন্য রেখে দিবে। অনেক কিছু থাকে যেগুলো আমাদের পরবর্তীতে খুব বেশি কাজে লাগে না। সেগুলো এড়িয়ে যেগুলো একদম মৌলিক, সেখানে বেশি সময় দিলে তা যুক্তিযুক্ত হয়।
১৩। স্কুলের সম্পদ নিয়ে চিন্তা করব না, বেতন তো দিই।
এটা একটা ভয়ংকর রকমের ভুল ধারণা।
স্কুল তোমার। তাই ওখানকার বাগান, শ্রেণিকক্ষ, আসবাব সবই তোমার। তুমি নিজে যে গাছটা যত্ন করে লাগিয়েছ, সেটার ফুল বা পাতা ছিড়লে নিশ্চয়ই তোমার ভালো লাগবে না। বা নিজের ঘর ময়লা থাকলেও তোমার খারাপ লাগবে। তাহলে স্কুলের প্রতি কেন আমরা এই যত্নটুকু দেখাব না? স্কুলের বেতন দিই বলেই কি অযথা বিদ্যুৎ বা পানি খরচ করব? ব্যবহার শেষে শৌচাগার নোংরা করে রাখব? এভাবেই আমরা সামাজিক বা সামষ্টিক সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে ব্যর্থ হই।
এই ছোট ছোট যত্নের ব্যাপার গুলো ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয় না বলে আমাদের রাস্তার ড্রেনের ঢাকনা গায়েব হয়ে যায়। ডাস্টবিনের ময়লা রাস্তায় পড়ে থাকে। যখন আমরা আমাদের স্কুলের সম্পদের প্রতি যত্নশীল হব, তখন আর রাস্তায় বা পার্কে ময়লা ফেলে আসব না। অযথা রাস্তার ধারের গাছের ডালপালা বা ফুল নষ্ট করব না।
১৪। কেউ কিছু বললে সোজা বাসায় গিয়ে বলতে হবে।
এটা করা ঠিক না। কেউ যদি তোমাকে এমন কিছু বলে, যাতে তোমার খারাপ লাগে, তাহলে একটু বিবেচনা করে দেখো। সে কি তোমার কোনো দোষ দেখিয়ে দিচ্ছে? নাকি তোমার কোনো কথা বা কাজ সংশোধনের জন্য বলছে? বুলিং করলে সেটা শিক্ষক কে আগে বলো এবং সব শিক্ষার্থী মিলে এর প্রতিকার করাই ভালো।
যদি পান থেকে চুন খসলেই বাবা-মা কে টেনে আনো, সেটা তোমার সম্পর্কে নেতিবাচক ভঙ্গি সৃষ্টি করে। মনে রেখো, তোমার বেশিরভাগ সমস্যা নিজেকেই মোকাবেলা করতে হবে। মা-বাবা, শিক্ষক, সহপাঠী এরা তোমাকে কেবল সাহায্য করতে পারে। মূল প্রব্লেম সলভিং তোমার নিজেরই করতে হবে। তাই বলে মা-বাবা কে কিছুই জানাবে না, তা ঠিক নয়। তোমার প্রতিদিনের কার্যকলাপ নিয়ে তাঁদের সাথে কথা বলো এবং পরামর্শ চাও। স্কুলে তোমার সব সমস্যাই তাঁরা সমাধান করবেন, সেটা আশা করা উচিত নয়।