কগনিটিভ বায়াস: সংজ্ঞা, ধরণ ও প্রভাব

বায়াস কথাটার মানেই পক্ষপাত। আমরা সবসময় যার বিরুদ্ধে থাকতে চাই।

কগনিটিভ বায়াস তাহলে কী?

মানুষের ব্রেন বা মস্তিষ্ক অনেক কার্যক্ষম হলেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মস্তিষ্ক ‘কগনিশন’ করে, অর্থাৎ চিন্তা, পরিকল্পনা, সমস্যা সমাধান প্রভৃতি কাজের মাধ্যমে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু সময়ে সময়ে সময়ে মস্তিষ্ক এতো কাজ না করে শর্টকাট উপায়ে, কোনো লজিক, সম্ভাবনা বা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ না করে ডিসিশন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যে বিষয়গুলো মস্তিষ্ককে তখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে প্রভাবিত করে, সেগুলোকে কগনিটিভ বায়াস বলা যায়। বায়াসের বিষয়গুলো আমাদের বিশ্বাস বা অভিজ্ঞতা থেকে আসে বলে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো সবসময় সঠিক নাও হতে পারে। সত্য বলতে, মানুষ সবসময় নিজেকে যেরকম Rational being ভাবে, বাস্তবে এতটা rational বা যৌক্তিক আসলে কেউই হতে পারেনা। প্রত্যেক মানুষই কম-বেশি, কোনো না কোনো ভাবে কগনিটিভ বায়াস দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে।

সাইকোলজিস্ট অ্যামোস টার্সকি ( Amos Tversky) এবং ড্যানিয়েল কাহনেম্যান (Daniel Kahneman) কগনিটিভ বায়াসের ধারণাকে প্রকাশ করেন ১৯৭২ সালে। যেহেতু আমাদের ব্রেনপাওয়ার এবং অ্যাটেনশন বা মনোযোগ সীমিত, তাই সাইকোলজিস্টরা কগনিটিভ বায়াসকে এই সীমাবদ্ধতার সাথে খাপ খাওয়ানোর পদ্ধতি (coping mechanism) হিসেবে দেখে থাকেন। এর মাধ্যমে মস্তিষ্ক শুধু বিশ্বাস বা ধারণার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে চায় বলে একে মেন্টাল শর্টকাট বা হিউরিস্টিকসও বলা হয়ে থাকে।

আমাদের মনের অনেকগুলো স্তর রয়েছে। এর মধ্যে সচেতন (conscious), অবচেতন (subconscious) এবং অচেতন (unconscious) এর নাম অনেকেই জানেন। আরো অনেকগুলো স্তর আছে কিন্তু সেদিকে আলোকপাত করতে চাচ্ছি না। আমরা চিন্তা ভাবনা পরিকল্পনা করে যত কাজ করি বা এই মুহূর্তে করছি, তার সবটা আসে কনশাস মাইন্ড বা সচেতন মন থেকে। আর প্রতিটি কাজের চিন্তাসহ প্রতিক্রিয়া, বাস্তবতার স্মৃতি এসব জমা হয় অবচেতন মনে। অনেকটা ব্রাউজারের ক্যাশের মতো। এই অবচেতন মন থেকেই কগনিটিভ বায়াস এর বিষয়গুলো আসতে থাকে। ফলে মানুষ অনেকসময় বুঝতেও পারে না যে তার সিদ্ধান্তগুলো পুরোপুরি যৌক্তিক নয়, সেগুলো ‘কিছু একটা’ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। যদিও তার আশেপাশের কেউ ব্যাপারটা বুঝতে পারেন।

কগনিটিভ বায়াস কেন হয়?

একটা কারণ তো বলে ফেলেছি, যে আমাদের মস্তিষ্ক সুপার কম্পিউটারের চেয়ে শক্তিশালী হলেও তার ধারণক্ষমতা সীমিত। সে একই সাথে তথ্য ধারণ করে এবং মোছে। তাই একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তাত্ত্বিকভাবে যে সবকিছু বিবেচ্য, তার অনেক কিছুই আমরা গোণায় ধরতে পারিনা।

আবেগ আরেকটি কারণ হতে পারে। যেসব বিষয় আমাদের স্বার্থের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট সেগুলোকে আমরা যেভাবে মূল্যায়ন করি, অন্য বিষয়গুলোকে সেভাবে করতে পারি না। যেমন রাস্তায় কোনো লোক অসুস্থ হয়ে পড়ে গেলে মানুষ যতটা উদ্বিগ্ন হয় নিজের আত্মীয় হলে তার চেয়ে অনেক বেশি অস্থিরতা কাজ করে।

বয়স। মানুষ যত বয়স্ক হয়, তত তার চিন্তাভাবনা নমনীয়তা হারাতে থাকে। বয়সের সাথে সাথে সঞ্চিত অভিজ্ঞতাগুলো কগনিটিভ বায়াসের একটা বড় অংশ তৈরি করে।

সামাজিক ধ্যানধারণা : মানুষ সবসময় চায় যে তার কাজ বা কথাবার্তা বা চালচলন সমাজ দ্বারা স্বীকৃত হোক। তাই সামষ্টিক কাজগুলো সমাজের অগ্রগামী কিছু মানুষের আচরণ দিয়ে প্রভাবিত হয়। যেমন: শিক্ষক যা করেন ছাত্র তাই অনুসরণ করে। শিক্ষক যদি কাউকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করেন, তাহলে কমবেশি সব ছাত্রদের চোখে ও মনে সেই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রাধান্য পায়।

কগনিটিভ বায়াস এর ধরণ:

হেলো ইফেক্ট (Halo effect):

একটা বৈশিষ্ট্য দিয়ে সমস্ত গুণাগুণ বিচারের কুবুদ্ধি দেয় এই ধরনের কগনিটিভ বায়াস। হেলোর ধারণাটা এসেছে ছবির হেলো থেকে, যেখানে একজন সেইন্টের মাথার উপরে একটি বলয় থাকে, যা থেকে আলো বিচ্ছুরিত হয় এবং সেই আলো শুভকে ইঙ্গিত করে।

কোনো বিষয়ে বা ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম ইম্প্রেশন বা অভিব্যক্তি ওই বিষয় প্রসঙ্গে বা ব্যক্তির সাথে আমাদের পরবর্তী ব্যবহারগুলো নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। যেমন মিসেস ‘ক’ আড়ং এর পোশাক পছন্দ করেন। আড়ং পোশাক থেকে শুরু করে জুতা, ব্যাগ, নানারকম শৌখিন বাক্স, ডেইরি, স্কিনকেয়ার ও কসমেটিক বিক্রি করে থাকে। এ সম্ভাবনা বেশি যে, মিসেস ‘ক’ এর যখন পোশাক বাদে উপর্যুক্ত বাদবাকি জিনিসের দরকার পড়বে, সঙ্গতিপন্ন হলে তিনি সেগুলো আড়ং থেকেই কিনতে চাইবেন। আড়ং তখন অন্য দোকানগুলোর সাপেক্ষে ‘বায়াজড’ হয়ে যাচ্ছে।

আরেকটি উদাহরণ। দেখা যায় স্কুল কলেজে সুদর্শন ছেলে বা মেয়েদের প্রতি ছাত্র শিক্ষক সবারই আলাদা দৃষ্টি থাকে। সে শারীরিকভাবে আকর্ষণীয় দেখতে বলে সবাই ভেবে নেয় সে বোধহয় বেশি পড়ুয়া, সামাজিক, সহানুভূতিশীল বা সহযোগিতার মনোভাবসম্পন্ন হবে। আদতে তার আচরণ কিন্তু প্রত্যাশার সাথে নাও মিলতে পারে।

ব্যান্ডওয়াগন ইফেক্ট (Bandwagon Effect) :

সবাই করছে দেখে আমিও করি, চিন্তাটা অনেকটা এরকম। যেমন কোনো কোম্পানি নির্দিষ্ট একটি পণ্যের মার্কেটিং এমনভাবে করলো যে, সবাই এর গুণাবলি নিয়ে প্রভাবিত হয়ে গেল এবং হুড়মুড় করে কিনতে লেগে পড়ল। বাংলাদেশে যখন ইভ্যালি, ইঅরেঞ্জ এর মতো কোম্পানিগুলো ব্যাপক অ্যাডভারটাইজমেন্ট আর স্পন্সরশিপের মাধ্যমে স্পটলাইটে আসলো, তখন মানুষ অন্যের দেখাদেখি তাদের জিনিস কিনতে বা অর্ডার দিতে থাকলো, কোনো বাছবিচার বা যাচাই বাছাই ছাড়াই।

দুঃখজনকভাবে, এই ধরনের বায়াসের সুযোগ নিয়ে আমাদের দেশে অনেক সমিতি বা সংস্থা এভাবে মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। তারা অনেক সময় কিছু ভাড়াটে লোকই নিয়োগ দেয়, যাদের কাজ থাকে বিভিন্ন কাহিনী রচনার মাধ্যমে মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা। শুধু ব্যবহার নয়, এই ধরনের কগনিটিভ বায়াস বিশ্বাস বা ধ্যানধারণাকেও প্রভাবিত করে। এ কারণেই সমাজের মানুষ অনেক ভুল ধারণাকেও সঠিক বলে মানে। যেমন : মুসলমানদের জন্য বাদ্যযন্ত্র হারাম হলেও বেশিরভাগ মানুষ একে হারাম বলে বিবেচনা করে না এবং অন্যদের দেখাদেখি যথারীতি এতে মশগুল থাকে।

রিসেন্সি ইফেক্ট (Recency effect) :

সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা। মানুষ দূর অতীতের চেয়ে নিকট অতীতের বিষয়বস্তু বেশি ভালোভাবে স্মরণ করতে পারে। নতুন কিছু শেখার সময় খেয়াল করলে দেখা যায় যে, শেষের দিকে শেখা বিষয়গুলো মনে থাকছে বেশি। বিজ্ঞাপনে এই কৌশলটা খুব খাটানো হয়। খেয়াল করে দেখবেন, বিজ্ঞাপন আকর্ষণীয় ভাবে শুরু হলেও সবচেয়ে চটকদার বা চমকপ্রদ বিষয় রাখা হয় একদম শেষেই। প্রতিটা বিজ্ঞাপনের স্লোগান যাতে মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে সেজন্য সেটাও সবার শেষে বলা হয়।

রিসেন্সি ইফেক্টের নাটের গুরু হচ্ছে শর্ট টার্ম মেমোরি। কোনো তথ্য পাবার পরে আমরা যদি মনের ভেতর সেটাকে নিয়ে নাড়াচাড়া না করি তাহলে খুব দ্রুতই তা হারিয়ে যায়। একারণেই বেশি আগের তথ্যের চেয়ে কম আগের তথ্য তুলনামূলক বেশি মনে থাকে।

হিন্ডসাইট বায়াস (Hindsight Bias):

“এরকম যে হবে তা আগেই জানতাম” টাইপ কথাবার্তার পেছনে এই ধরনের কগনিটিভ বায়াসেরই ভূমিকা। হোক দুর্ঘটনা, খেলায় জয় পরাজয়, প্রার্থী নির্বাচন, কঠিন প্রশ্নের উত্তর বা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু, সবকিছুই কেউ না কেউ ‘আগে থেকে জানেন।’’ কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, তারা কেউ আগে থেকে তা জানান না। এ ধরনের বায়াসের অসুবিধা হলো, এটি কখনো কখনো মানুষকে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং এই ধারণা গড়ে তোলে যে, সে ভবিষ্যতের সব ঘটনাই আগে থেকে অনুমান করতে পারবে। এভাবে সে ভাবতে থাকে সূর্য পূর্বদিকে ওঠার মতো পৃথিবীর সবকিছুই প্রেডিক্টেবল বা অনুমানযোগ্য। অনেক উদ্যোক্তার মধ্যে এ ধরনের চিন্তাভাবনা দেখা যায়। প্রজেক্ট বা স্টার্টআপে হোঁচট খেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তখন নিজেকেই দোষারোপ করেন যে, কেন এটা তিনি অনুমান করতে পারেননি।

সাঙ্ক কস্ট ফ্যালাসি (Sunk cost Fallacy) :

ধরে নিন একটা সিনেমার টিকিট কেটেছেন বা ডাটা খরচ করে সেটা ডাউনলোড করেছেন। রেস্তোরাঁয় খুব শখ করে কিছু অপরিচিত বিদেশি খাবারের অর্ডার দিয়েছেন। অনলাইনে পছন্দ হয়েছে দেখে একটা পোশাকের অর্ডার দিয়েছেন। সিনেমা-খাবার-পোশাক কোনোটাই মনমতো বা ভালো হয়নি। সিনেমার কাহিনি বস্তাপচা, খাবারে প্রচুর চর্বি আর পোশাকটি আরামদায়ক নয়। তারপরও আপনি সিনেমা দেখছেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে খাবার খাচ্ছেন আর পোশাকটি পরে অস্বস্তিকর অবস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এটাই সাংক কস্ট ফ্যালাসি। অর্থাৎ আপনার ভুল জায়গায় কিছু খরচ হয়ে ক্ষতি হয়ে যাবার পরও আপনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসছেন না, পয়সা উসুল করবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

বাজে সিনেমা দেখে সময় নষ্ট করাটা আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য লাগবে কারণ সেখানে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। এই মুহুর্তে বের হয়ে আসা সবচেয়ে ভালো এবং যৌক্তিক অপশন হওয়া সত্ত্বেও এই কগনিটিভ বায়াস আপনাকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দিচ্ছে।

অনেক ব্যবসায় দেখা যায় প্রচুর লস খাওয়ার পরও ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্ট্র‍্যাটেজি পরিবর্তন করছেন না কারণ তারা সেটার পিছনে প্রচুর টাকা ঢেলেছেন। বা সরকারি ‘শ্বেত হস্তী’ প্রকল্প শেষ পর্যন্ত লাভজনক হবে না জেনেও সেটি বাতিল করা হয় না, এতদিন ধরে যা বিনিয়োগ করা হয়েছে তার অন্তত কিছু তুলে নেওয়ার আশায়।

সেল্ফ সার্ভিং বায়াস (Self serving bias) :

এক কথায় এর ব্যাখ্যা দিতে গেলে বলতে হয়, “নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা।” ক্রিকেট খেলায় দেখা যায় যে, কোনো দল জিতলে নিজেদের কৃতিত্ব, কিন্তু হারলে দোষ স্বাগতিক পিচের। ফুটবল খেলায় জিতলে অসাধারণ, কিন্তু হারলে মনে হয় রেফারির ভুল সিদ্ধান্ত দায়ী।

নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার যে মানসিকতা, তা এই বায়াসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের নেতিবাচক দিক বিশ্লেষণ করার প্রবণতাও কমে যায়, যা একগুঁয়েমির দিকে ঠেলে দেয়।

ডানিং ক্রুগার ইফেক্ট (Dunning-Kruger effect):

কিছু মানুষ নিজেদেরকে যতটা জ্ঞানী ভাবে, আসলে ততটা জ্ঞানী তারা নয়। এই যে স্বল্প যোগ্য মানুষেরা নিজেদেরকে অনেক বেশি যোগ্য ভাবে, এটাই ডানিং ক্রুগার ইফেক্ট বলে ব্যাখ্যা করা যায়। ‘খালি কলসি বাজে বেশি’ এ প্রবাদটা এক্ষেত্রে একেবারে যুতসই।

সমস্যাটা হচ্ছে, এই কগনিটিভ বায়াস দ্বারা প্রভাবিত মানুষ স্বীকার করতে বা বুঝতেই চায় না যে, তারা ভুল এবং তাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মানুষের অদক্ষতা তার আত্মবিশ্লেষণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আরো যেসব প্রবণতা দেখা যায়:

  • মানুষ নিজের ব্যাপারে বাড়িয়ে বলতে খুব পছন্দ করে।
  • নিজের গুণগান করতে গিয়ে অন্যের যোগ্যতার মূল্যায়ন করে ন।
  • নিজের ভুল থেকে শেখা দূর, সেগুলো শনাক্ত করতে পারে না বা চায় না।

এহেন নির্বোধমার্কা ব্যবহারের একটা নাম আছে, ইলুশরি সুপিরিয়রিটি। অর্থাৎ মানুষ কল্পনায় নিজেকে অনেক সুপিরিয়র হিসেবে দেখে এবং বাস্তবেও সেরকম ব্যবহারই করে থাকে।

স্টেরিওটাইপ (Stereotype) :

কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী, লিঙ্গ বা দলের মানুষের সম্পর্কে বদ্ধমূল কিছু ধারণা যা সমাজে যুগ যুগ ধরে চলে। এটা ইতিবাচক হতে পারে, নেতিবাচকও হতে পারে। স্টেরিওটাইপ হতে পারে জাতিগত, লৈঙ্গিক বা সাংস্কৃতিক। যেমন:

টিনেজার ছেলেমেয়েরা কথা শোনে না,উচ্ছৃঙ্খল ।

অমুক জাতি লোক ঠকাতে ওস্তাদ।

নীল ছেলেদের রঙ।

এগুলো সত্য হতে পারে, নাও পারে। দেখা যায় যে, কিছু মানুষের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে স্টেরিওটাইপের সৃষ্টি হয় এবং সেগুলোই মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে অন্য মানুষের বিশ্বাসে পরিণত হয়। সব ছেলেরা নীল পছন্দ করে না। কিন্তু বছরের পর বছর চলতে চলতে এই ধারণা এমন গেঁড়ে বসেছে যে খেলনা বিক্রেতারা এটা ছেলেশিশুদের মাথার মধ্যে খুব ভালোভাবেই ঢুকিয়ে দেয়। সব টিনেজার কথা শোনে না এটাও ঠিক নয়। তাদের বয়সটা অস্থিরতার বলেই স্থবির নিয়মকানুন তাদের ভালো লাগে না। একঘেয়েমিতে তার আক্রান্ত হতে চায় না। উপরন্তু অনেক টিনেজার আছে যাদের মানসিক পরিপক্কতা অনেক প্রাপ্তবয়স্কের চেয়ে বেশি। এতসব বিবেচনা না করে শুধু ঝোঁকের বশেই অনেক অভিভাবক তাদের উচ্ছৃঙ্খল বলে আখ্যা দেন।

আরো কয়েক ধরনের বায়াস সম্পর্কে জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

কগনিটিভ বায়াস এড়াতে হলে কী করব?

এতক্ষণ তো অনেক কথাবার্তা পড়লেন। কী মনে হচ্ছে, আপনি নিজেই অনেক বেশি বায়াসড? আসলে বায়াসড আমরা সবাই। কিন্তু কগনিটিভ বায়াস যদি দৈনন্দিন জীবনে যৌক্তিকতার জায়গা দখল করে নিতে থাকে, তা চিন্তার বিষয়। অতিরিক্ত কগনিটিভ বায়াস থেকে বাঁচতে নিচের বিষয়গুলো ভেবেচিন্তে দেখতে পারেন:

  • আগে স্বীকার করুন নিজের কাছে যে আপনি বেশি বায়াসড হয়ে চলছেন। মানুষ যদি ভুলকে ভুল বলে শনাক্ত নাই করতে পারে, তাহলে তা কীভাবে সংশোধন করবে? বিভিন্ন কগনিটিভ বায়াস সম্পর্কে জানুন এবং মিলিয়ে নিন তা আপনার দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ব্যবহার ও সিদ্ধান্তকে কতটুকু প্রভাবিত করছে।
  • অন্যের কাছ থেকে শেখার ও জানার আগ্রহ রাখুন। আপনি অবশ্যই পৃথিবীর সবকিছু জানতে পারেন না।
  • অন্যের যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারা জরুরি।
  • কাউকে শুধুমাত্র তার অতীত বা মানুষের কাছ থেকে শোনা কথার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করাও সঠিক নয়। তার সাথে মিশে তার বর্তমান বিবেচনা করে তার সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নিন।
  • সমালোচনা, নিজের মতের বিরুদ্ধ মতকে আক্রমণ না করে তার প্রতি মনোযোগী হোন। আপনার মতের সাথে মিলিয়ে দেখুন তারপর যৌক্তিক বিশ্লেষণ করুন।
  • মানুষের উপর কোনো ধারণা চাপিয়ে দেওয়ার চেয়ে এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করতে আহ্বান করুন। তাদেরকে বলতে দিন। নিজেকে শুনতে দিন।

কগনিটিভ বায়াস আমাদের অস্তিত্বেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু তা যাতে আমাদের ভুলভাবে প্রভাবিত না করে, তা খেয়াল রাখা কর্তব্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top